স্মার্টলি কথা বলার উপায় – ১০টি বাছাই করা টিপস
সুন্দর ও স্মার্টলি কথা বলা আমাদের ব্যক্তিত্বে আলাদা মাত্রা যোগ করে। ব্যক্তিত্বের মাধুর্যতা বহন করে। আমাদের মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্য, ভেতরের অনুভূতি প্রকাশের জন্য আমাদের কথা বলতে হয়। মনের ভাব, ভিতরের অনুভূতি প্রকাশের জন্য কথা বলার বিকল্প আর কিছু নেই। যান্ত্রিক এই জীবনে প্রতিদিন শত শত মানুষের সাথে ভাব বিনিময় করতে হয় আমাদের। আর এই শত শত মানুষগুলো প্রথমেই আমাদের কথা বলার ধরন দেখে আমাদের ব্যক্তিত্বের হিসাব কষে। কথা বলার ধরনের উপর ভিত্তি করেই তাদের মনে মনে আমাদের চারিত্রের ছোটখাটো একটি প্রতিচ্ছবি তৈরী করে। কেননা ধরুন আপনি দামি সুট-বুট, দামি পারফিউম গায়ে লাগিয়ে একজনের সাথে উগ্র ভাষায় বা অপ্রিতিকর ভাষায় অথবা রুক্ষ স্বরে কোন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেন তাহলে ওই ব্যক্তি আপনার সম্পর্কে ভালো ধারনা দাড় তো করাবেই না বরং আপনাকে বেয়াদব বা খারাপ মানুষের আক্ষা দিতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।
সুতরাং আপনার পোষাক-আষাক বা বাহ্যিক দিকটা যতই সুন্দর হোক না কেন আপনি যদি সুন্দর ভাবে এবং সুন্দর ভঙ্গিতে কথা না বলেন তাহলে সবই বৃথা হয়ে যাবে। তাই সুন্দর বাহ্যিকতাকে ধরে রেখে এর পাশাপাশি আপনি যদি স্মার্টলি কথা বলেন তাহলে আপনার ব্যক্যিত্ব শতভাগ পূর্ন হবে। কেননা মানুষকে কনভেন্স করার প্রধান উপায় হলো আপনার কথা। সুন্দর, সাবলিল এবং স্মার্টলি কথা দ্বারাই শ্রোতা প্রভাবিত হয়। শুধু যে কোন কাজের ক্ষেত্রেই এটা আপনার উপকারে আসবে তা নয়। এই গুনটি আপনার চারিত্রিক গুনাবলিকে করবে আরো সমৃদ্ধময়। এবং এই গুনটি রপ্ত করতে পারলে জীবনের এই দীর্ঘ চলার পথে প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে আপনাকে সাহায্য করবে।
তাই নিচে ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো। যেগুলো অনুসরণ করে আপনিও স্মার্টলি কথা বলতে পারবেন।
১। আঞ্চলিকতা পরিহার করুন
আমাদের দেশে বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে কিছু শুনে তো প্রথমে বোঝার কোন উপায়ই নেই যে সেগুলো বাংলা ভাষা নাকি অন্য কিছু! নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষাকে সম্মান করতে শিখুন। সে ভাষায় কথা বলুন। তবে এটাও খেয়াল রাখবেন তা যেন আপনার কথায় কোন ছাপ না ফেলে যায়। আপনার কথায় যদি আঞ্চলিক উচ্চারণ ভঙ্গি চলে আসে বা কোন আঞ্চলিক শব্দ ঢুকে পড়ে তবে অফিস, ক্লাসে বা বন্ধুদের সামনে যেখানেই যান, আপনাকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে চাকরির ইন্টারভিউ দেবার সময় সর্বাবস্থায় আঞ্চলংবাচনভঙ্গি পরিহার করুন।
২। কিছু শব্দের উচ্চারণ সঠিক করুন
অনেক সময় দেখা যায় আমরা ঠিকঠাক কথা বলছি। কিন্তু কিছু শব্দের বেলায় আমরা সেই ভুল উচ্চারণই করে যাচ্ছি। প্রথমে চিহ্নিত করুন ঠিক কোন কোন শব্দ উচ্চারণে আপনার সমস্যা হচ্ছে। যেমন, আমরা অনেকেই বলি “কেমন আসেন” “ভাল আসি” ।কিন্তু ‘স’ এর জায়গায় যদি ‘ছ’ ব্যবহার করা যায় তাহলে “কেমন আছেন” কথাটা অনেক শ্রুতিমধুর শোনায়। অনেকে ‘প’ এর জায়গায় ‘ফ’ ব্যবহার করেন, অথবা ‘ব’ র জায়গায় ‘ভ’ । এই সামান্য কিছু শুব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ কিন্তু আপনার কথা আকাশ পাতাল ফারাক এনে দিতে পারে। তবে পরিবর্তন একদিনে হবে না। নিজে প্র্যাকটিস করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। নিজের বাসা থেকেই।
৩। মিশ্র ভাষা পরিহার করুন
অনেকে মনে করেন ইংরেজিতে কথা বলা, হিন্দিতে কথা বলা বেশ একটা ভাবের ব্যাপার। আপনি ইংরেজিতে অবশ্যই কথা বলবেন। কারন এটা আন্তর্জাতিক ভাষা। তবে তখনই, যখন আপনার দরকার হবে এই ভাষায় কথা বলা। অথবা বন্ধুদের সাথে অনুশীলন করতে পারেন। আপনার উপকারই হবে। কিন্তু বিনা কারণে ইংরেজিতে কথা বলা অন্য একজন বাঙ্গালির সাথে শুধু মাত্র স্মার্টনেস দেখানোর জন্য! এটা বোকামি। তার উপর আবার একটা বাক্যের অর্ধেক ইংরেজি অর্ধেক বাংলা! আপনি যদি ভেবে থাকেন এভাবে কথা বললে সবাই আপনাকে বেশ স্মার্ট ভাববে, তাহলে আপনার ধারণা ভুল।
৪। বলার আগে চিন্তা করুন
হুট করে কোন কথা বলে ফেলার চেয়ে বরং একটু সময় চিন্তা করুন আপনি কি বলতে যাচ্ছেন, যেটা বলতে যাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে কি না এবং আপনার কথায় শ্রোতার কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কথা বলার আগে একটু চিন্তা করার ফলে অনেক বেফাঁস কথা বলার হাত থেকে বেঁচে যাবেন, এবং আপনার কথা হয়ে উঠবে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত।
৫। একটু বিরতি দিয়ে কথা বলুন
আমরা যখন বাসায় বা বন্ধুদের সাথে কথা বলি তখন আমাদের খেয়াল থাকে না যে আমরা কি বলছি। হড়বড় করে সব কথা বলে ফেলি অনেক দ্রুত। এর চেয়ে একটু ধীরে প্রত্যেকটা শব্দের উপর পর্যাপ্ত জোর দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার কথা সবাই প্রথমবারেই বুঝবে এবং আপনাকে দেখবে একটু আলাদা দৃষ্টিতে।
৬। শব্দভান্ডার বাড়ান
হোক বাংলা কিংবা ইংরেজি, সব ভাষার ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত শব্দ জানা আবশ্যক। এতে করে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না যে এই শব্দের পর আপনি অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করবেন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব শব্দ ব্যবহার করি, বাংলা অভিধান খুলে তার সমার্থক শব্দগুলো দেখে নিতে পারেন। অথবা এমন অনেক শব্দ খুঁজে নিতে পারেন যেগুলো সাধারণ কথায় আমরা খুব কমই ব্যবহার করি, এবং তা প্রয়োগ করুন উপযুক্ত ক্ষেত্রে বুঝে। এতে আপনার কথা যেমন সুন্দর হবে তেমনি শ্রোতার মনে আপনার জ্ঞান সম্পর্কে ভাল ধারনা জন্মাবে।
আরো পড়ুনঃ ১৫টি লাভজনক ছোট ব্যবসায়ের আইডিয়া
৭। অঙ্গভঙ্গি
অঙ্গভঙ্গি আপনার কথার মুল্য অনেকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে সঠিক বডি ল্যাংগুয়েজ। আপনার এক্সপ্রেশন, দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গি, হাত নাড়ানো এসব দিকে মনযোগ দিন। কোন কিছুই অতিরিক্ত করার দরকার নেই। তবে কথার সাথে যেন অঙ্গভঙ্গি খাপ খায় সে চেষ্টা করুন। অনেকের অভ্যাস থাকে অন্যের সাথে কথা বলার সময় কাঁধে হাত দেয়া, বা বারবার গায়ে খোঁচা দিয়ে নিজের দিকে মনযোগ ফেরানোর। আপনার যদি এমন কোন অভ্যাস থেকে থাকে, দয়া করে এখনি পরিহার করুন।
৮। আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন
ধরা যাক, ক্লাস বা অফিসের কোন প্রেজেন্টেশন। টপিক সম্পর্কে আপনার খুবই ভাল ধারণা থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন আপনি। ভয়েস টোন বাড়ান। যেখানে জোরে কথা বলা দরকার সেখানে জোরে, যেখানে আস্তে কথা বলা দরকার সেখাসে আস্তে কথা বলুন। এবং এমন ভাবে কথা বলুন, যাতে শ্রোতার মনে ধারনা জন্মে আপনি যা বলছেন তা সঠিক। এমনকি আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা বলেও আপনি পার পেয়ে যেতে পারেন অনেক সময়।
৯। শুনুন এবং বুঝুন
শুধু মাত্র আপনিই হড়বড় করে সব বলে যাবেন, এটা স্মার্টনেসের মধ্যে পড়ে না। বরং আপনি যার সাথে কথা বলছেন তার প্রত্যেকটা কথা শোনা এবং বোঝাও স্মার্টনেসের অন্তর্ভুক্ত। কেউ আপনার সাথে কথা বলার সময় তাকান সরাসরি তার দিকে, তার চোখের দিকে। কোন কথা বুঝতে সমস্যা হলে তার ঠোটের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করুন সে কি বলছে। এটাকে বলে ‘লিপ রিডিং’ যেটা কম শ্রবন শক্তির অধিকারী মানুষজন ব্যবহার করে থাকেন। তার কথায় সম্মতি জানান, মাথা বা হাত নেড়ে তাকে বোঝান যে আপনি তার কথা মন দিয়ে শুনছেন। এবং কারো কথা শোনার সময় মন দিয়ে শুনুন এবং তার প্রশ্ন বুঝার চেষ্টা করুন। কারণ প্রশ্ন ঠিকভাবে বুঝলেই কেবল আপনি ঠিক উত্তরটা দিতে পারবেন, এতে অনেক ভুল বুঝাবুঝিও কমবে।
১০। অনুসরণ করুন
প্রত্যেকটা মানুষই স্বতন্ত্র। আপনার অবশ্যই নিজস্বতা বজায় রাখা উচিত। আপনি নিজে যেভাবে কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন সেভাবেই বলবেন। অন্যকে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার কোন মানেই হয় না। তবে শেখার জন্য একজন গুরু আবশ্যক। শিক্ষক ছাড়া আপনি কখনো কোন বিষয় ভালভাবে শিখতে পারবেন না। তাই কথা বলার স্টাইল শেখার জন্য বেছে নিতে পারেন নিজের কোন প্রিয় অভিনেতা, রেডিও বা টিভির কোন উপস্থাপককে। বোঝার চেষ্টা করুন, তিনি কিভাবে কথা বলছেন, টোন কখন কোথায় কেমন, এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন। এর পর আপনি পরিস্থিতি এবং পরিবেশ বুঝে তার কিছু অংশ প্রয়োগ করুন আপনার বাস্তব জীবনে।
0 Comments